মেট্রোরেলে আপনার যেসকল নিয়মকানুন মেনে চলা উচিৎ

মেট্রোরেলে ভ্রমণের জন্য আপনার টিকেট কেনার জন্য কী করতে হবে, আপনি প্রথম মেট্রোরেলে চড়তে গেলে কীভাবে উঠবেন ও নামবেন তার নিয়ম এবং কোচে উঠে আপনার কী কী করা উচিৎ এবং কী করা উচিৎ না। এছাড়াও মেট্রোরেল স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় বিশেষভাবে কী খেয়াল করতে হবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এই পোস্টে। তো চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

স্টেশনের বাহিরে যেসব নিয়ম মানা উচিৎ

স্টেশন এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সহযোগিতা করা উচিৎ। মেট্রোরেলের পিলারে কোনো পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন, চিকামারা, পেইন্টিং ইত্যাদি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেয়া উচিৎ না। কেউ এরূপ ক্রিয়াকলাপ করলেও তাকে নিষেধ করা উচিৎ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা উচিৎ। মেট্রোরেল লাইন এরিয়ার আশেপাশেও ঘুড়ি উড়ানো, ফানুস উড়ানো ইত্যাদি কোনোভাবেই ঠিক না। এগুলা উড়ে এসে মেট্রোরেলের ইলেকট্রিক সিগন্যাকে বিঘ্ন ঘটায়। ফলে, মেট্রোরেল চলাচল ব্যহত হয় ও শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়। মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে কোনো স্টল বসানো, পার্কিং জোন হিসাবে ব্যবহার করা ইত্যাদি নিষিদ্ধ।

স্টেশনে যেসব নিয়ম অনুসরণ করা উচিৎ

স্টেশনের অভ্যন্তরে কোনোপ্রকার খাদ্যবস্তু গ্রহণ, ধুমপান ইত্যাদি কোনোভাবেই উচিৎ না। আপনি ধুমপানে অভ্যস্ত হলে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে যেয়েই করবেন। কোনোভাবেই উপরে ধুমপান করতে চেষ্টা করবেন না, এতে স্মোক ডিটেক্টর আপনার ধুমপানের ধোয়া ডিটেক্ট করে স্টেশনকে জরুরী এলার্ম দিতে পারে, তাতে যাত্রীরা ভয় পেয়ে যাবে এবং সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। তাই সকল প্রকার খাওয়াদাওয়া করবেন স্টেশনের বাহিরে। কোনোপ্রকার পোষা প্রাণী বহন করা যাবেনা। আপনার শখের বিড়াল, কুকুর ইত্যাদি কোনো প্রাণী নিয়ে আসবেন না, এটি কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট নিষেধ আছে।

সিঙ্গেল জার্নি টিকেট কাটার সময় অবশ্যই লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রমানুসারে কাটবেন, অযথাই ভীড় করবেন না। আরেকটা কাজ করা যাবেনা, লাইন ছাড়াই সামনে গিয়ে কাউকে বলবেন না যে আপনার জন্যও টিকেট নিতে। এটি অনৈতিক কাজ , কারণ পিছনে অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে আপনার।

মেট্রোরেল স্টেশনে উঠতে চলন্ত সিঁড়িতে অবশ্যই বাম দিকে দাঁড়াবেন এবং ডান দিক ফাঁকা রাখবেন, যাতে কারো জরুরী প্রয়োজনে আপনাকে সহজেই ওভারটেক করতে পারে। এস্কেলেটর বা চলন্ত সিঁড়িতে আপনার সাথে থাকা বাচ্চাদের ধরে রাখুন। জরুরী মুহূর্তে ইমার্জেন্সি বাটন প্রেস করে এস্কেলেটর থামিয়ে দিন। তবে অনুগ্রহপূর্বক কোনোভাবেই ইচ্ছাকৃত ভাবে ইমার্জেন্সি বাটন চেপে এস্কেলেটর বন্ধ করবেন না। এতে উক্ত এস্কেলেটর মেইন্টেইনেন্স টীমের দ্বারা আবার চালু করতে সময় প্রয়োজন হয়। তাই কোনোভাবেই এটি করা যাবেনা। স্টেশনের টিকেট ভেন্ডিং মেশিনের সামনে যারা দাঁড়াবেন অবশ্যই ভাড়ার সমপরিমান ভাংতি টাকা নিয়ে দাঁড়ান, কেননা বেশীরভাগ সময়েই মেশিনে টাকা ভাংতি থাকেনা তখন আপনার সময় অপচয় ব্যতীত কিছুই হবেনা।

টিকেট ভেন্ডিং মেশিন থেকে টপ-আপ করার সময় একটু সতর্কতা অবলম্বন করুন ও ধৈর্য ধারণ করুন। তারাহুরো করে রিচার্জ করতে যেয়ে আপনার কার্ডটি ব্লাকলিস্টেড হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলবেন না। পরিপূর্ণ ভাবে রিচার্জ সম্পন্ন হলে আপনাকে এনাউন্সমেন্ট দিবে কার্ড তুলে নিতে, তখন তুলবেন। স্টেশনে কর্মরত ব্যক্তিদের সাথে ভালো আচরণ করুন, কোনোভাবেই তার সীমাবদ্ধতার অতিরিক্ত চাপে ফেলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবেন না। তাদের সাথে সহনশীল আচরণে সচেষ্ট থাকুন। বিশাল বড় বা ভারী মালামাল মেট্রোরেলে বহন নিষিদ্ধ। লিফটে শুধুমাত্র বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা উঠবেন। তবে যখন ফাঁকা থাকে তখন অন্যান্য কেউ-ও ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার। যেমন: বৃদ্ধ লোক, প্রতিবন্ধী লোক, প্রেগন্যান্ট নারী ইত্যাদি ধরনের লোকেরা অগ্রাধিকার পাবেন।

মেট্রোরেলের ভিতরে যেসব বিষয়ে মেনে চলা উচিৎ

মেট্রোরেলে উঠার সময় অবশ্যই প্লাটফর্মের নির্দিষ্ট মার্কিং করা যায়গায় দাঁড়িয়ে উঠবেন। অর্থাৎ, ট্রেনে উঠার সময় দুই পাশ থেকে উঠবেন এবং মাঝখান থেকে নামতে দিবেন। এখানেও নিয়ম হচ্ছে, আগে নামতে দেয়া ও পরে উঠা। কিন্তু যেহেতু কয়েক সেকেন্ড খোলা থাকে গেইট, সেহেতু দুই পাশ থেকে উঠতে দিয়ে মাঝখান থেকে নামতে দিলে সময় সাশ্রয় হবে এবং পরিবেশ শৃঙ্খল থাকবে।

শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য ডেডিকেটেড কোচ হচ্ছে প্রথম কোচটি।অর্থাৎ, প্লাটফর্মের একেবারের সামনের কোচে যেতে হবে। তবে অন্যান্য কোচেও মহিলারা উঠতে পারবেন তাতে নিষেধ নাই। কিন্তু পিক আওয়ারে প্রথম কোচ অপেক্ষা পরবর্তী কোচ গুলোতে তুলনামূলক বেশী ভীড় হয়, সেক্ষেত্রে মহিলাদের উচিৎ প্রথম কোচেই ভ্রমণ করা। তবে বিশেষ কারণে প্রথম কোচে উঠতে না পারলে অবশ্যই অন্যান্য কোচো সমান অধিকারে উঠতে পারবেন।


আরও পড়ুন: কীভাবে মেট্রোরেল ভ্রমণ করবেন

আরও পড়ুন: মেট্রোরেল চলাচলের নতুন সময়সূচি

আরও পড়ুন: কার্ড ব্লাকলিস্টেড হয় যেসব কারণে


কোচে উঠে কোনোভাবেই গেইটে ভীড় করা যাবেনা।উঠেই ভিতরের দিকে যথাসম্ভব ফাঁকা স্থানে চলে যেতে হবে। এবং আপনার পিঠে কোনো ব্যাগ থাকলে তা হাতে নিয়ে নিতে হবে বা পায়ের মাঝখানে রাখতে হবে। কোনোভাবেই আপনার ব্যাগ বা বহনকৃত কিছু দ্বারা কাউকে ক্ষতি করা যাবেনা। আপনার ব্যাগে যেন দাহ্য পদার্থ, মাছ – মাংস ইত্যাদি না থাকে, এগুলো থাকলে ট্রেনের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।

মেট্রোরেলের কোচে উঠার পর বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ ও প্রেগন্যান্ট মহিলাদের বসার সুযোগ করে দিতে হবে। সর্বপরি, সহনশীল আচরণে অভ্যস্ত হতে হবে। অন্যের সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে করে যথাসম্ভব সহানুভূতি প্রদর্শন করতে সচেষ্ট থাকবেন। মেট্রোরেল থেকে নেমে এক্সিট হওয়ার সময় AFC গেইটে আপনার সিঙ্গেল জার্নি টিকেট জমা দিয়ে যাবেন অবশ্যই। এছাড়া MRT pass / Rapid Pass ব্যবহারকারীরা এক্সিট হওয়ার সময় খেয়াল করবেন, ডিসপ্লে তে ব্যালেন্স দেখা যাচ্ছে কিনা। যদি ব্যালেন্স দেখা না যায় তাহলে অবশ্যই আবার টাচ করতে হবে। নয়তো এক্সিট না হয়ে গেলে পরবর্তী দিন এন্ট্রি হতে গেলেই জরিমানা করবে আপনাকে।

 

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বন্ধু, এই পোষ্টের মাধ্যমে আজকে আমরা জানলাম ‘মেট্রোরেলে আপনার যেসকল নিয়মকানুন মেনে চলা উচিৎ’ তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। পরবর্তী পোস্টে আমরা জানবো ঢাকা মেট্রোরেলের অন্য কোনো বিষয়ে। আমাদের ওয়েবসাইটের প্রতিদিনের সকল পোষ্টের আপডেট জানতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। এছাড়া টেলিগ্রামে আপডেট পেতে জয়েন করে রাখুন আমাদের অফিশিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেল।