কীভাবে মেট্রোরেল ভ্রমণ করবেন

ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অন্যতম গণপরিবহনের নাম মেট্রোরেল। গত ২৮ই ডিসেম্বর ২০২২ সালে শুভ উদ্বোধন করা হয় সর্বাধুনিক এই বাহনকে। ঢাকার বুক চিরে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে যাত্রী সেবা দিচ্ছে এটি। এক দল দক্ষ কর্মীর সমন্বয়ে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে যাত্রী পরিবহনের কাজ করছে প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজারেরও বেশী। আজ আমরা জানবো কীভাবে মেট্রোরেল ভ্রমণ করবেনঃ

ঢাকা মেট্রোরেলের স্টেশন কতটি

বর্তমানে চালু থাকা এই রুটে মেট্রোরেলের স্টেশন রয়েছে ১৬ টি। যথা- উত্তরা উত্তর স্টেশন, উত্তরা সেন্টার স্টেশন, উত্তরা দক্ষিণ স্টেশন, পল্লবী স্টেশন, মিরপুর ১১ স্টেশন, মিরপুর ১০ স্টেশন, কাজীপাড়া স্টেশন, শেওড়াপাড়া স্টেশন, আগারগাঁও স্টেশন, বিজয় সরণি স্টেশন, ফার্মগেট স্টেশন, কারওয়ান বাজার স্টেশন, শাহবাগ স্টেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন, বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশন, মতিঝিল। এছাড়াও কাজ চলছে কমলাপুর স্টেশনের।

মেট্রোরেলের টিকেট কিভাবে কাটতে হয়

এরপরে লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রমানুসারে টিকেট নিলেন টিকেট কাউন্টার থেকে। এরপর এন্ট্রি গেইটে টিকেটটি টাচ করে ঢুকবেন ভিতরে। যদি আপনি বয়স্ক, প্রেগন্যান্ট বা অসুস্থ ব্যক্তি হন তবে লিফটে উঠবেন। অন্যথায় এস্কেলেটর/ চলন্ত সিড়িতে উঠবেন। তবে যদি লিফটে ভীড় না থাকে তবে আপনি লিফটও ব্যবহার করতে পারেন। মূলত এই লিফট দেয়া হয়েছে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। যা-ই হোক, আপনি লিফট বা স্কেলেটরে বা সিঁড়ি দিয়ে প্লাটফর্ম বা কনকোর্সে উঠলেন। যেহেতু আপনি উত্তরা থেকে শাহবাগ যাবেন সেহেতু আপনার বাম দিকে যেতে হবে। এরপরে প্লাটফর্মে যেয়ে অপেক্ষা করবেন মেট্রোরেলের। তবে আরেকটা বিষয় বলি, আপনি যখন স্টেশনে ঢুকলেন তখনই খেয়াল করে থাকবেন বড় বড় ডিসপ্লেতে টাইম দেখাচ্ছে, সেখানে দেখে নিবেন আপনার গন্তব্যের ট্রেন কত মিনিটস পর ছাড়বে। সে অনুযায়ী আপনি প্লাটফর্মে যেতে পারেন। তারাহুরোর কোনো কারণ নাই। কিছুক্ষণ পরপরই ট্রেন আসবে। এরপরে আপনি প্লাটফর্মে উঠে বসার জন্য বেঞ্চ পাবেন। যদি অসুস্থ বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হন তবে বসতে পারেন উক্ত বেঞ্চে। নয়তো প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেন।

মেট্রোরেলে চড়ার নিয়ম

বিশেষ ভাবে মনে রাখবেন, প্লাটফর্মে হলুদ দাগের অপরে যাওয়া যাবেনা। রেলিং এর সাথে মিশবেন না বা রেল লাইনের দিকে উঁকিঝুঁকি দিবেন না, এটা নিষেধ রয়েছে। যদি হলুদ দাগের উপরে যান তখনই আনসার বাহিনীর ভাইয়েরা বা মেট্রোরেল পুলিশ (এমআরটি পুলিশ) বাহিনীর সদস্যরা আপনাকে সরে যেতে বলবে বাঁশি বাজিয়ে।

এরপরে আপনার কাঙ্ক্ষিত ট্রেন চলে আসবে প্লাটফর্মে। ট্রেনে উঠার জন্য গেইট দেখতে পাবেন, সেখানে দুই পাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়াবেন। মাঝখান থেকে লোকজন নামবে এবং দুই পাশ থেকে উঠবে, তা ওখানে রেখা দেখতে পাবেন মেঝেতে। সেই রেখা অনুযায়ী ক্রমানুসারে মেট্রোতে উঠবেন। তবে উঠেই গেইটে দাঁড়িয়ে থাকবেন না, যথাসম্ভব ভিতরে চলে যাবেন, ফাঁকা স্থানে দাঁড়াবেন।

মেট্রোরেলের কোচ বা বগিতে উঠার পর ভিতরের দিকে যথাসম্ভব ফাঁকা স্থানে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। হাতে বা পিঠে ব্যাগ থাকলে তা সামনের দিকে রাখতে হবে যাতে অন্যের অসুবিধা না হয়। মেট্রোরেল চলাচলের সময় হেলান দিয়ে কোনো দিক পরে যাওয়ার ভয় থাকতে পারে তখন উপরে হাতল ধরবেন অথবা মাঝখানে দেয়া খুঁটির মতো ওটা ধরে দাঁড়াবেন। ভীড়ের সময় যাত্রীদের গ্যাদারিং একটু বেশী থাকবে, তখন আপনার গায়ে ঘেসে দাঁড়ালেও রাগান্বিত হওয়ার কারণ নাই, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এমনটা হতেই পারে।

মহিলাদের জন্য মেট্রোরেলে রয়েছে নির্ধারিত কোচ সেখানে মহিলারা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবেন। এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে সর্বশেষ বগিতে হুইলচেয়ার পার্কিং এর ব্যবস্থা। প্রথম বগিতে শুধুমাত্র নারীরাই উঠবেন, যদি কোন নারীর সাথে কোন পুরুষ থাকে তাহলে উক্ত পুরুষকে সাধারণ বগিতে পাঠিয়ে দিবেন এবং নারী উক্ত নির্ধারিত প্রথম কোচে অবস্থান করবেন কোন অবস্থাতেই নারীদের বগিতে পুরুষ উঠবে না। যদি কোন পুরুষ নারীদের বগিতে উঠে তাহলে তাকে অনুরোধ করে সসম্মানে দ্বিতীয় বগিতে পাঠিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেক বগির সাথে অন্য বগির সংযোগ রয়েছে। মাঝখানে থাকা স্লাইড ডোরটি টান দিলে পরবর্তী বগিতে দেওয়া যাবে।

মেট্রোরেলে যা করা যাবেনা

মেট্রোরেল পেইড জোনে অবস্থানকালে কোন প্রকার খাবার গ্রহণ ধূমপান ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। যদি কেউ এরূপ কাজকর্ম করে থাকে তাহলে তার জন্য জরিমানা বিধান রয়েছে। এছাড়াও মেট্রোরেলে কোন পোষা প্রাণী বহন করা নিষিদ্ধ অর্থাৎ আপনার বিড়াল কুকুর ইত্যাদি প্রাণী বহন করা যাবে না। মেট্রোরে চলাকালীন আপনার দ্বারা অন্য কোন যাত্রীর ক্ষতি বা অসুবিধা না হোক এমনটাই প্রত্যাশা। এবং কেউ আপনার দ্বারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না পড়েন।

এরপর আপনি মেট্রোরেলে করে আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার নির্ধারিত গন্তব্য শাহবাগে। শাহবাগে বামদিকে আপনার প্ল্যাটফর্ম সেখানে নামবেন। নেমে আপনি দেখবেন লিফট আছে, স্কেলেটর আছে, পায়ে হেঁটে নামার সিড়ি আছে আপনার পছন্দমত যেকোনোটিতে নামতে পারেন তবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হলে লিফট ব্যবহার করবেন, অন্যথায় লিফটে ভিড় করবেন না। চলন্ত সিঁড়ি বা লিফট বা পায়ে হেটে নামার সিঁড়ি দিয়ে সারিবদ্ধভাবে নিচে নামুন। নিচে এসে দেখবেন এক্সিট হওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন। উক্ত লাইনে সারিবদ্ধভাবে এক্সিট হবেন। যদি আপনার কার্ডে (Rapid or MRT pass)পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকে তবে এখানে ইএফও (অ্যাক্সেস ফেয়ার অফিস) থেকে কার্ড রিচার্জ করতে পারবেন। এক্সিট হয়ে গেলে নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাবেন, এখানেও লিফট, চলন্ত সিঁড়ি ও পায়ে হেঁটে নামার সিঁড়ি রয়েছে আপনার পছন্দমত যেকোনোটিতে নিচে নামবেন।

শাহবাগে নামার পর ডানদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল), বামদিকে বারডেম হাসপাতাল। আপনার নির্ধারিত গন্তব্যে এভাবে মেট্রোরেল দ্বারা পৌঁছে যাবেন নির্বিঘ্নে।


আরও পড়ুন: মেট্রোরেল চলাচলের নতুন সময়সূচি

আরও পড়ুন: র‍্যাপিড পাস ও এমআরটি পাস রিচার্জ পদ্ধতি

আরও পড়ুন: ঢাকা মেট্রোরেল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নোত্তর


 

আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কথা

বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন, মেট্রোরেলে যাতে আপনার দ্বারা কেউ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না পড়ে। হুট করেই কারো ছবি তুলবেন না এবং সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করবেন না। স্টেশনে কর্মরত স্টাফদের সাথে ভালো আচরণ করুন তারাও আপনার আমার আত্মীয়দের মধ্যেও কেউ হতে পারে সুতরাং কোনোভাবেই তাদের সাথে অসদাচরণ করবেন না। টিকিট নেওয়ার সময় সমপরিমান ভাংতি টাকা দিতে সচেষ্ট থাকিবেন, তাহলে আপনার টিকেট নিতে সময় কম প্রয়োজন হবে এবং অন্যরাও উপকৃত হবে।

যদি যথেষ্ট ভিড় না থাকে তবে টিকিট ভেন্ডিং মেশিন আপনার কার্ড রিচার্চ ও সিঙ্গেল জার্নি টিকিট নিতে পারবেন ভিড়ের সময় টিকেট ভেন্ডিং মেশিন থেকে টিকিট নিতে কিছুটা বেগ পোহাতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনি লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট নেওয়াটাই বুদ্ধিমান এর কাজ। স্টেশনে কর্মরত সকলের সাথে ভদ্র আচরণ করতে আহ্বান করা গেল। দায়িত্বগত এমআরটি পুলিশদের নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতা প্রয়োজন হলে পরস্পরে সহযোগিতা নিতে পারেন বিশেষ প্রয়োজনে এমআরটি পুলিশগণ আপনাকে তল্লাশি করতে চাইলে তাদেরকে সহযোগিতা করুন। স্টেশনে দায়িত্বরত পুলিশরা আপনাকে নিরাপত্তা দিতে সর্বদাই প্রস্তুত আছেন। আপনার বিশেষ অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, মেট্রোরেলে নির্ধারিত টিকিটের দাম ব্যতীত কোন টাকা বেশি দিতে হয় না।

অসাধু আনসার সদস্য বা অন্য অসাধু কেউ যদি নির্ধারিত টিকিটের দামের চেয়ে বেশি টাকা চেয়ে থাকে অর্থাৎ ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি করতে চায় তাহলে তাদেরকে এড়িয়ে চলুন এবং সুযোগ থাকলে স্টেশন কর্তৃপক্ষকে ধরিয়ে দিন। অনেক সময় দীর্ঘ লাইন এবং স্টেশন বন্ধ হওয়া কালীন শেষ ট্রেনগুলোতে সিঙ্গেল জানি টিকিট ক্রয় করার জন্য সময় থাকে না তখন কিছু অসাধু লোকজন ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রির চেষ্টা করতে পারে যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও দণ্ডনীয় অপরাধ।

 

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বন্ধু, এই পোষ্টের মাধ্যমে আজকে আমরা জানলাম ‘কীভাবে মেট্রোরেল ভ্রমণ করবেন’ তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। পরবর্তী পোস্টে আমরা জানবো ঢাকা মেট্রোরেলের অন্য কোনো বিষয়ে। আমাদের ওয়েবসাইটের প্রতিদিনের সকল পোষ্টের আপডেট জানতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। এছাড়া টেলিগ্রামে আপডেট পেতে জয়েন করে রাখুন আমাদের অফিশিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেল।