মেট্রোরেল যাত্রীদের সকল সমস্যার সমাধান ইএফও কাউন্টারে
Excess Fare Collection Office বা EFO কি? মেট্রোরেলে কিসের জন্য এই অফিসটি ব্যবহার হয়? এসবের সকল প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন অমিয় নাভিদ ধ্রুব। চলুন জানি Excess Fare Collection Office বা EFO সম্পর্কে:
মেট্রোরেলের ইএফও কাউন্টার কি?
এই অফিসটির নাম হলো বাড়তি ভাড়া আদায় অফিস, ইংরেজিতে বলে Excess Fare Collection Office বা সংক্ষেপে EFO। এই অফিসের মূল কাজ হলো Single Journey Ticket (SJT) ধারী যাত্রীদের পাওনা অতিরিক্ত ভাড়া (যদি কোনো এক স্টেশনের টিকিট কেটে সেই স্টেশন পেরিয়ে সামনের স্টেশনে নামলে) আদায় করা এবং বিভিন্ন নিয়ম ভঙ্গের জন্য জরিমানা আদায় করা। এর পাশাপাশি নতুন এমআরটি কার্ড রেজিস্ট্রেশন করা, এমআরটি কার্ড ও র্যাপিড পাসের ব্যালান্স রিচার্জ করা, কারও ব্যবহার না থাকলে সেই কার্ড ফেরত নেওয়া এবং কোনো কারণে ব্লকড/ব্ল্যাকলিস্ট/ড্যামেজ হয়ে যাওয়া পুরাতন কার্ড রি-ইস্যু করার কাজও এখানে হয়ে থাকে।
প্রতিটি স্টেশনে সিঙ্গেল জার্নি টিকিট কাউন্টার ও টিকিট ভেন্ডিং মেশিনের বিপরীতে এবং এক্সিট-এন্ট্রি গেটের মাঝে এর অবস্থান। প্রতিটি স্টেশনের দুইদিকে একটি করে মোট দুইটি এমন অফিস আছে।
হঠাৎ এই অফিস নিয়ে লেখার কারণ হলো যাত্রীদের মধ্যে বিশেষ করে এমআরটি কার্ড ও র্যাপিড পাস ধারীদের বিভিন্ন সমস্যা হলে যখন বলা হয় যে EFO অফিসে যোগাযোগ করেননি কেনো, তখন তারা বুঝতে পারেন না যে কোথায় যাবার কথা বলা হচ্ছে। অথবা কি কি সমস্যায় EFO থেকে সমাধান দিতে পারে, বা কিভাবে তারা EFO তে যোগাযোগ করবেন/সমস্যাগুলো বলবেন। সেটা নিয়েই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই পোস্টটি লেখা।
এর আগে একনজরে দেখে নিই এমআরটি কার্ড ও র্যাপিড পাসধারীদের সাথে হওয়া কিছু নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা ও ভোগান্তিগুলোঃ
★ এন্ট্রি ও এক্সিট হবার সময় ঠিকঠাক পাঞ্চ না হওয়া। যেহেতু এই সময়ে তাড়া থাকে অনেক তাই অনেকেই খেয়াল করতে পারেন না যে পাঞ্চ হবার শব্দ হয়েছিলো কিনা বা স্ক্রিনে ভাড়া দেখিয়েছিলো কিনা। এজন্য হয়কি যে গন্তব্যে পৌঁছে বেরুবার সময় জরিমানা গুনতে হয়, এমনকি কার্ড ব্লকড/ব্ল্যাকলিস্টও হয়ে যায়।
★ যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে বা কোনোভাবে বেখেয়ালে এন্ট্রি করার পর ৫৯ মিনিটের বেশি সময় অতিবাহিত হলে জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়।
★ এন্ট্রি করার পর ট্রেন আসার আগেই/ট্রেনে চড়ার আগেই আবার কোনো ইমার্জেন্সি বা জরুরি কারণে বেরুতে হলে ৫ মিনিটের অতিরিক্ত সময় অতিবাহিত হলে জরিমানা দিতে হয়।
এগুলো খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং হুটহাট করে জরিমানা গুনতে হলে যাত্রীদের জন্য খুবই হতাশাজনক ব্যাপার। অবশ্যই এসব ভুল যাত্রীরা ইচ্ছে করে করেন না অথবা যান্ত্রিক ত্রুটির ফলে শিডিউল বিপর্যয়ের জন্যও তারা দায়ী নন। কিন্তু যেহেতু নিয়ম ভঙ্গ হয়ে গেছেই, তাই জরিমানা নিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য। তবে এমন জরিমানা যাতে গুনতে না হয় বা এমন পরিস্থিতি যাতে এড়াতে পারেন সেটার জন্য কিন্তু EFO থেকে সমাধান ও সাহায্য আছে অবশ্যই। এখন সেটাই বলছি।
আরও পড়ুন::: মেট্রোরেলে আপনার যেসকল নিয়মকানুন মেনে চলা উচিৎ
আরও পড়ুন::: মেট্রোরেলের কার্ড ব্লাকলিস্টেড হলে বা হারিয়ে গেলে করণীয় কি
আরও পড়ুন::: মেট্রোরেলে কোন স্টেশন থেকে কোথায় যেতে পারবেন
তবে তার আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বলে নিই যে যাত্রীরা এসব ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবে যেই ভুলটা প্রায় সবাই-ই করে বসেন সেটা হলো কার্ডটা পাঞ্চ করে ফেলা। একবার পাঞ্চ করে ফেললে ওইটা সার্ভারে রেকর্ড হয়ে যায়, অতএব তখন EFO এর দায়িত্বশীল ব্যক্তির কিছু করার থাকেনা। তো সেক্ষেত্রে তাকে দোষারোপ করে লাভ নেই, বরং তিনি তার এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত দায়িত্বটিই পালন করছেন মাত্র, আর নিয়মানুযায়ী সার্ভারে একবার আপনার দ্বারা হওয়া ভুল রেকর্ড হয়ে গেলে সেটার জরিমানা দিতে হবেই, ব্যাপারটা যতই দুঃখজনক হোক না কেনো।
এবার বলছি যেভাবে EFO তে সাহায্য নিয়ে জরিমানা এড়াতে পারেনঃ
★এন্ট্রি ও এক্সিটের সময় যদি সন্দেহ হয় যে আপনার পাঞ্চ ঠিকমতো হয়নি, তবে তৎক্ষনাৎ EFO তে যেয়ে আপনার কার্ডটি দিয়ে বলুন ‘এন্ট্রি/এক্সিট স্ট্যাটাস চেক করে দিন’ বা ‘দেখেন তো ঠিকমতো এন্ট্রি/এক্সিট’ হয়েছে কিনা। তখন দায়িত্বরত কর্মকর্তা সেটা চেক করেন এবং যদি ঠিকমতো পাঞ্চ না হয় তবে সেই স্ট্যাটাস রিভাইস করে দেন এবং আবারও পাঞ্চ করে ঢুকতে বা বেরুতে বলেন। এক্ষেত্রে কোনো জরিমানা হবেনা। (আজকে উত্তরা উত্তর থেকে এক্সিটের সময় আমার এই ঝামেলা হলে EFO তে বলার পর ওখানের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এটা ঠিক করে দেন এবং আবারও পাঞ্চ করে বেরুতে বলেন)।
★শিডিউল বিপর্যয় বা অন্য কারণে ৫৯ মিনিটের বেশি অতিবাহিত হলে এক্সিট গেটে পাঞ্চ করার আগে বলবেন যে ‘শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে, এজন্য এতো সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। আমার ট্রিপ ক্যান্সেল করে দিন’। এটা বললেও ওখানে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি বিষয়টা ফিক্স করে দেন। এরপর পাঞ্চ করলে আর জরিমানা হবেনা।
★তেমনি এন্ট্রি করার পর ইমার্জেন্সি কারণে ট্রিপ না নিয়েই বেরুতে গেলেও এক্সিট গেটে পাঞ্চ করার আগে EFO তে বলে নিবেন যে ‘আমার ট্রিপ ক্যান্সেল করে দিন’। অনেক সময় মনে হয় আমার তো ৫ মিনিট যায়নি, আমার টাকা কাটবে/কাটলো কেনো? সত্যি কথা বলতে, কনকোর্স তলা থেকে প্ল্যাটফর্মে যেতে বা প্ল্যাটফর্ম থেকে কনকোর্সে নামতে প্রতিবারই গড়ে দেড়-দুই মিনিট সময় লাগে। ওদিকে প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দাঁড়িয়ে স্থির হতেও এক-দেড় মিনিটের মতো লেগেই যায়। তো এভাবেই পাঁচ মিনিটের বেশি চলে যায়। আর যদি নাও বা যায়, তবুও সেফ থাকাই তো ভালো না?
★অতিরিক্ত SJT কেটে ফেললে যদি সেটার ট্রিপ না লাগে তবে এন্ট্রি হবার আগে অনুরূপভাবে EFO তে বলে ট্রিপ ক্যান্সেল করে নিবেন, এবং টাকাও ফেরত পাবেন। একবার উত্তরা সেন্টার থেকে অতিরিক্ত দুইটা SJT কেটে ফেলছিলাম। একটা পাঞ্চ করে ফেলছিলাম, আরেকটা করিনি। যেটা করিনি সেটার রিফান্ড পেয়েছিলাম।
আমার এই লম্বা পোস্টের উদ্দেশ্য হলো যাত্রীরা অহেতুক ভোগান্তির সম্মুখীন যাতে না হন এবং তারা যেনো তাদের প্রাপ্য অধিকার ও সুবিধা সম্পর্কে সচেতন হন সেটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে শেয়ার করা। যদি একজন যাত্রীও এতে উপকৃত হন তবুও আমার এই পোস্ট সার্থক হবে। তবে শেষ করার আগে আরেকবার মনে করিয়ে দেই যে অবশ্যই এমন সমস্যার সম্মুখীন হলে এন্ট্রি-এক্সিট গেটে কার্ড আগেই তাড়াহুড়ায় পাঞ্চ করে বসবেন না এবং মনে মনে নিজের এন্ট্রি ও এক্সিট নিয়ে সন্দেহ থাকলে একদম সাথেসাথেই EFO তে নির্দ্বিধায় জানাবেন, তাহলে সমস্যাও যেমন হবেনা ইন শা আল্লাহ তেমনি আপনি সঠিকভাবে ও যৌক্তিকভাবে এপ্রোচ করলে বা সমস্যাটা খুলে জানালে EFO তে দায়িত্বরতরাও যথেষ্ট আন্তরিক এসব সমস্যা সমাধানের জন্য।