MRT pass নিবেন নাকি Rapid Pass

RAPID PASS এবং MRT PASS কোনটি নিবেন তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই রয়েছে সংশয়।

আজকে এই দুই কার্ডের বিস্তারিত পার্থক্য তুলে ধরবো আপনাদের জন্যঃ

  • প্রথমত MRT Pass কী?

MRT Pass এর মানে হলো Near-Field Communication (NFC) অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ভিত্তিক একটি সংযোগবিহীন স্মার্ট আইসি কার্ড। এই কার্ড দিয়ে ঝামেলাবিহীন ভাবে অতিসহজে মেট্রোরেলের (ভবিষ্যতে বাস, লঞ্চ, মেট্রোরেল কর্তৃক পরিচালিত শপিংমল ইত্যাদির বিল) ভাড়া পরিশোধ করা যায়।

 

  • দ্বিতীয়ত হলো RAPID Pass কী?

RAPID PASS হলো জাপানের Sony কোম্পানীর তৈরী একটি Near-Field Communication (NFC) সর্বাধুনিক স্মার্ট কার্ড। বাংলাদেশের গণপরিবহনের সমন্বিত ই-টিকেটিং (One Card for all Transport) ব্যবস্থা প্রবর্তণ ও ভাড়া আদায়ের লক্ষ্যে এটিকে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্মার্ট কার্ড বা Rapid Pass প্রচলন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন গণপরিবহন যেমন- ঢাকা মেট্রোরেল, বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট, বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন সার্ভিস, BIWTC’র নৌ-যান সার্ভিস, সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন বাস সার্ভিসে স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে যাতায়াতে ঝামেলাহীন পেমেন্টে RAPID PASS সিস্টেম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিটিসিএ এই দারুণ কার্যক্রম গ্রহণ করছে।

 

  • এখন প্রশ্ন হতে পারে যে MRT Pass কীভাবে নিতে হয়?

নিম্নোক্ত তথ্যাবলী নিয়ে MRT Pass সকাল ৭.৩০ মিনিটস থেকে রাত ০৭.৩০ মিনিটস পর্যন্ত মেট্রোরেলের যেকোন স্টেশনের Excess Fare Office (অথবা Customer Service Centre) থেকে ইনস্ট্যান্ট নিবন্ধন করে ক্রয় করা যাবে। কার্ড ইস্যুতে যেসব তথ্য আপনার লাগবে:

১. কিছু তথ্য সহ একটা রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
(রেজিস্ট্রেশন ফর্ম স্টেশন উক্ত থেকে ফ্রিতে পাওয়া যাবে অথবা আপনি ঘরে বসে মেট্রোরেলের ওয়েবসাইট হতে MRT Pass Registration Form টি নিজেই ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।)
২. বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র বা তার স্বচ্ছ ফটোকপি। অবশ্য এটির ইনফো হলেই হবে, কপির খুব প্রয়োজন নাই।

৩. আপনি নগদ মাত্র ৫০০ টাকা। (যার মধ্যে ২০০ টাকা কার্ড বাবদ ডিপোজিট এবং অন্য ৩০০ টাকা কার্ডে রিচার্জ করে দেয়া থাকবে।)

তবে মনে রাখবেন উক্সত ঠিক তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলে আপনার কার্ড রিফান্ড, কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্থ কার্ড পুনঃপ্রদান, হারানো কার্ড আপনাকে পুনঃপ্রদান, আপনার হারানো কার্ড ফেরত এবং হারানো কার্ডের মধ্যে রিচার্জ করা টাকাও ফেরত পাওয়া যায়। (স্টেশনে আপনার একটি কার্ড রেজিস্ট্রেশন করতে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ মিনিটস সময় প্রয়োজন হয়।)

এবার জানবো RAPID Pass কীভাবে নিতে হয়!

এটি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নিম্নোক্ত শাখা/উপ-শাখা থেকে ক্রয় ও রিচার্জ করা যাবে-

১) সোনারগাঁও জনপদ শাখা, উত্তরা

২) উত্তরা শাখা, উত্তরা

৩) রবীন্দ্র সরণি শাখা

৪) পল্লবী শাখা, মিরপুর

৫) মিরপুর শাখা, মিরপুর

৬) মিরপুর সার্কেল-১০ শাখা

৭) ইব্রাহিমপুর শাখা, ক্যান্টনমেন্ট

৮) শেওড়াপাড়া শাখা, মিরপুর

৯) কর্পোরেট শাখা, মতিঝিল

১০) ইন্দিরা রোড শাখা, ফার্মগেট

১১) খালপাড় উপ-শাখা, উত্তরা

১২) তালতলা উপ-শাখা, আগারগাঁও

১৩) সচিবালয় ফাস্ট ট্র্যাক, বাংলাদেশ সচিবালয়

১৪) ফার্মগেট উপ-শাখা, ফার্মগেট

১৫) কাওরান বাজার শাখা, কাওরান বাজার

১৬) গ্রীন রোড শাখা, পান্থপথ

১৭) এলিফ্যান্ট রোড শাখা

১৮) সেগুনবাগিচা উপ শাখা, সেগুনবাগিচা

১৯) বঙ্গবন্ধু এভিনিউ শাখা, গুলিস্তান

২০) মতিঝিল বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা, গুলিস্তান

২১) শান্তিনগর শাখা, শান্তিনগর

২২) নিউ মার্কেট শাখা, নিউ মার্কেট

২৩) সাতমসজিদ রোড শাখা, ধানমন্ডি

২৪) ধানমন্ডি শাখা, মিরপুর রোড

২৫) নিউ ইস্কাটন মাকা, ইস্কাটন, মগবাজার

২৬) শ্যামলী শাখা, শ্যামলী

২৭) খিলগাঁও শাখা, তালতলা, খিলগাঁও

২৮) আর.কে.মিশন রোড উপ-শাখা, মতিঝিল

২৯) রামপুরা শাখা, রামপুরা

৩০) বিজয়নগর শাখা, বিজয়নগর

৩১) বসুন্ধরা শাখা, বসুন্ধরা

৩২) তেজগাঁও শাখা, নাবিস্কো, তেজগাঁও

৩৩) মগবাজার শাখা, মগবাজার

৩৪) মুগদা উপ শাখা, মুগদা

আরো পডুনঃ মেট্রোরেলে ইন্টারচেঞ্জ কী এবং কোন কোন স্টেশনে হবে

এছাড়া আপনি দিয়াবাড়ি ও আগারগাও মেট্রোরেল স্টেশন এর DBBL এর বুথ থেকেও র‍্যাপিড পাস ক্রয় করতে পারবেন। এই Rapid Pass কার্ডের প্রাথমিক মূল্য মাত্র ৪০০ টাকা। তন্মধ্যে মাত্র ২০০ টাকা প্রাথমিক রিচার্জ এবং বাকি ২০০ টাকা উক্ত কার্ডের মূল্য ।

 

  • এখন জানতে ইচ্ছে হতে পারে যে, কোন কার্ডে সুবিধা কী?

উভয় কার্ডেই প্রায় একই ধরনের সুবিধা তুলে ধরা হয়েছে।

 

  • MRT অথবা Rapid Pass কার্ডে কীভাবে রিচার্জ করতে হবে?

মেট্রোরেল স্টেশনের টিকেট বিক্রয় মেশিন (Ticket Office Machine, Ticket Vending Machine) থেকে উভয় কার্ডি রিচার্জ করা যাবে। এবং Rapid Pass উক্ত নির্দিষ্ট ব্যাংক থেকেও রিচার্জ করা যাবে ( এবং স্টেশনেও যাবে)। তবে ভবিষ্যতে মোবাইল ব্যাংকিং থেকেও রিচার্জের ব্যবস্থা করা হতে পারে।

 

  • RAPID Pass এবং MRT pass এর বাহ্যিক পার্থক্য কী?

উভয় কার্ডের ব্যবহারে বাহ্যিক দিক থেকে আর কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করতে পারছি না শুধুমাত্র প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ব্যতীত।

 

  • একজন ব্যক্তি সর্বমোট কতটি কার্ড ইস্যু করতে পারবে?

একজন ব্যক্তি চাইলে একাধিক কার্ড ইস্যু করতে পারবেন। তবে সাজেস্ট করা হছে একই পরিচয়পত্রের বিপরীতে একটিমাত্র কার্ড নেয়ার জন্য।

 

  • আপনার একটি কার্ড দিয়ে একসাথে কতজন যাতায়াত করতে পারবে?

একটি কার্ড ব্যবহার করে একই টাইমে যেকোনো মাত্র একজন ব্যক্তি যাতায়াত করতে পারবেন।

  • এইসব কার্ড কীভাবে ব্যবহার করতে হবে?

স্টেশনের পেইড জোন বা ভিতরে প্রবেশের জন্য AFC গেইটের (Passenger Gate) আপনার নির্ধারিত স্থানে  MRT Pass / Rapid Pass কার্ডটি শো করুন বা টাচ করুন। (কার্ডগুলো আধুনিক NFC পদ্ধতি ব্যবহৃত হওয়ায় উক্ত AFC গেইটের নির্ধারিত স্থানের ১০ সে.মি এর মধ্যে কার্ডটি আনলেই মেশিনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা রিড করতে সক্ষম হয়। তাই এই কার্ডটি নির্ধারিত স্থানে ঘষাঘষি করা বা জোরে টাচ করারও প্রয়োজন নাই)। ভ্রমণ শেষে বাহির হওয়ার সময়ও একই পদ্ধতি অনুসরণ করবেন।

 

  • এই কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে?

১) আপনার কার্ডি টি মেট্রো স্টেশনের  প্যাসেঞ্জার গেইটে-এ Entry করার সময় ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে নিবেন যে আপনার কার্ডটি এন্ট্রি হয়েছে কি না। যদি এন্ট্রি না হয়ে থাকে তাহলে সে কার্ড দিয়ে কিন্তু বাহির হওয়ার Gate-এ Exit হতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আপনাকে মেন্যুয়ালে EFO-তে ভাড়া পরিশোধ করে এরপর সুইং গেইট দিয়ে বাহির হতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত হবে গত কয়েকদিনের ভ্রমণের উপর ভিত্তি করে।
২) আপনা কার্ডটি টি Passenger Gate-এ Exit করার সময়ও অত্যন্ত ভালো ভাবে খেয়াল করে দেখে নিবেন যে কার্ডটি এক্সিট হয়েছে কি না। যদি Exit না হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তী দিন আপনি Exit না করে কোনোভাবেই ভ্রমণ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে পরবর্তী দিনে Exit করালে জরিমানা মাত্র ৬০ টাকাসহ ভাড়া কর্তন হবে। তাই Pass-ব্যবহারকারীদের কাছে বিশেষ অনুরোধ Entry/Exit-এর সময় ২-৪ সেকেন্ড ধৈর্য ধরে Passenger Gate-এ আপনি ভালো করে দেখে আপনার কার্ডটি Entry/Exit করে নিবেন।
৩) আপনার কার্ডটি সতর্কতার সাথে ব্যবহার করবেন যেন ভেঙ্গে বা হারিয়ে না যায়।

আরও পড়ুনঃ মিরপুর-১০ স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে ভাড়ার তালিকা ও গন্তব্য

 

  • এই কার্ড হারিয়ে গেলে বা ভেঙ্গে গেলে আপনার করণীয় কী?

আপনার ব্যবহারিত MRT pass কার্ডটি ভেঙ্গে গেলে ২০০ টাকা এবং হারিয়ে গেলে আপনার মাত্র ৪০০ টাকা দিয়ে নতুন কার্ড নিতে হবে। এবং এই কার্ড ও ব্যালেন্সের মেয়াদ মাত্র ১০ বছর।

  • ক্ষতিগ্রস্থ আপনার Rapid Pass কার্ড পুন প্রদান: ব্যবহারকারী ক্ষতিগ্রস্থ কার্ড অপারেটরকে ফেরত দিয়ে পুনঃ প্রদান ফি বাবদ মাত্র ২০০/- টাকা প্রদান করে নতুন কার্ড নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে উক্ত অপারেটর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে আপনার নতুন প্রদানকৃত কার্ডে পূর্বের ব্যালেন্স স্থানান্তর করে দিবেন।আপনার হারানো Rapid Pass কার্ড ফেরত : এই কার্ড ব্যবহারকারী হারানো কার্ড ফেরত পেলে উক্ত অপারেটরকে জমামূল্য ফেরত প্রদানের জন্য দিবেন। অতঃপর অপারেটর সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে কার্ড নিষ্ক্রিয় করে তার রিফান্ড ফি বাবদ মাত্র ২০/- টাকা কেটে নিয়ে একই দিনে তার কার্ডের মূল্য ফেরত দিবেন। তবে Rapid Pass এর রিচার্জ এবং কার্ডের মেয়াদ লাইফ টাইম (নিবন্ধনকৃত কার্ড ভেঙে/ হারিয়ে গেলে নুতুন কার্ড পাওয়া যাবে।

 

 

প্রিয় পাঠক বন্ধু, এই পোষ্টের মাধ্যমে আজকে আমরা জানলাম ‘MRT pass নিবেন নাকি Rapid Pass’ তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। পরবর্তী পোস্টে আমরা জানবো ঢাকা মেট্রোরেলের অন্য কোনো বিষয়ে। আমাদের ওয়েবসাইটের প্রতিদিনের সকল পোষ্টের আপডেট জানতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। এছাড়া টেলিগ্রামে আপডেট পেতে জয়েন করে রাখুন আমাদের অফিশিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেল।